আমাদের গল্প 

আমরা WFTO (World Fair Trade Organization) স্বীকৃত একটি ফেয়ার ট্রেড প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি ছোট শহর-সৈয়দপুরে অবস্থিত। আমরা প্রাকৃতিক ও হাতে তৈরী পণ্য বানাই, যা জীবনে যোগ করে অনন্য এক মাত্রা।

সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস: বাংলাদেশে

আশা ও ক্ষমতায়নের এক কারিগর

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম নেয়ার পর, যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে, উত্তররাঞ্চলের একটি ছোট শহর সৈয়দপুরে যখন ভারতের বিহার থেকে রেলওয়ে বিভাগের কাজের উদ্দেশ্যে আগত বিহারী সম্প্রদায় বাস্তুহীন ও কর্মহীন হয়ে পড়েন ও দারিদ্রের কষাঘাতে যখন তারা বিপর্যস্ত; তখন তাদের সামাজিক নিরাপত্তা, নতুন ঠিকানা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এমসিসি (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) নামে একটি মানবিক সংস্থা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

এইভাবেই জন্ম নেয় “একশন ব্যাগ হ্যান্ডিক্রাফট” নামে একটি ছোট সেলাই কেন্দ্র যা ছিলো তাদের প্রথম উদ্যোগ।

সেইসময় এই সম্প্রদায়ের কয়েকজন নারী বিশেষ করে বিধবা এবং পরিবারের প্রধান সদস্যরা হাতে তুলে নেন সুই আর সুতো, বানাতে শুরু করেন পাটের ব্যাগ, যা তাদের জন্য একটি নতুন ও আশাপ্রদ জীবনের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। 

ফেয়ারট্রেডের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে নিশ্চিত করি ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা যাতে সকলের জন্য টেকসই ভবিষ্যত নির্মান করা সম্ভব হয়।

আমরা চাই আপনার ঘর আলোকিত হোক আমাদের পণ্যে যা তৈরি হয় সৈয়দপুরে, যার আছে জড়িয়ে আছে আমাদের আশা জাগানিয়া, সুন্দর ও শক্তিশালী জীবনের গল্প।

এভাবে এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন পনেরো শতাধিক নারী কারিগর, যাদের জন্য নিশ্চিত হয়েছে ন্যায্য মজুরী, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আর তারা অর্জন করেছেন আত্মনির্ভর হয়ে উঠবার এক অদম্য মনোবল।

কেবলমাত্র পণ্য উতপাদনই এমসিসির লক্ষ্য ছিলো না, তারা চেয়েছিলেন পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের সার্বিক অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে।

ক্ষমতায়িত নারী মানে একটি শক্তিশালী পরিবার যেখানে শিশুদের শিক্ষার অধিকার সংরক্ষিত এবং সুসজ্জিতভাবে স্কুলে যাবার সময় তারা যখন হাসে, সেইসব সহাস্য মুখে আমরা সুন্দর ও আশাদীপ্ত আগামীর প্রতিফলন দেখতে পাই।

ন্যায়ভিত্তিক একটি বিশ্ব গড়ার স্বার্থে সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস টেকসই উন্নয়নের অন্তর্গত চেতনাকে ধারণ করে এবং ডাব্লিউএফটিও একতার গর্বিত সদস্য হিসাবে সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেসও ন্যায্য বানিজ্যের প্রচার ও ন্যায্য বিশ্ব গড়ে তুলতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে।

সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর ৪০০ এরও বেশী শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষার উপকরণ বিতরন করে সহযোগীতা করেছে এই প্রতিষ্ঠান।

সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ শুধুমাত্র একটা ব্যবসা নয় বরং এটি একটি আন্দোলনের নাম।

একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো চর্চার মধ্য দিয়ে এখানে সকল কারিগর নিজের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার এবং এই প্রতিষ্ঠানের সহ মালিকানাও তাদের আছে। তারা এখানে আত্মনির্ভরতা ও মর্যাদার পথ ধরে উদ্যাক্তা হিসাবেও বিকশিত হবার সুযোগ পান।

ফেয়ারট্রেডের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে নিশ্চিত করি ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা যাতে সকলের জন্য টেকসই ভবিষ্যত নির্মান করা সম্ভব হয়।

আমাদের গল্পঃ স্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনের অভিযাত্রা

১৯৭৭- জন্ম নেয় “একশন ব্যাগ হ্যান্ডিক্রাফটস” বিহারী নারীদের জন্য সেলাই এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াসে।

১৯৮৬- ইস্টার্ন স্ক্রিন প্রিন্টার্স এই কার্যক্রমের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করে, এবং এই প্রিন্টিং দক্ষতা ক্ষমতায়নের পথে আরো এগিয়ে নেয় নারী কারিগরদের এই অভিযাত্রাকে।

১৯৯১- এই দুটো উদ্যোগকে একত্রীকরণের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে “সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস”

আজ, সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাংক্ষার শক্তি ও জোরালো উদ্দেশ্যের সাক্ষী হয়ে। আপনি যখন স্বকীয়কে নির্বাচন করেন তখন এই কাহিনীর একজন অংশী হয়ে ওঠেন আপনিও-যেখানে সৌন্দর্যের সাথে মিশে আছে অর্থবহতা আর আপনার প্রতিটি ক্রয়ে প্রতিধ্বনিত হয় ক্ষমায়িত নারীদের সাফল্য আর অগ্রসরমান এক সম্প্রদায়ের গল্প। 

 

মিশন

PROVIDING FAIR JOBS TO WOMEN

আমরা বিভিন্ন হ্যান্ডমেইড ফেয়ার ট্রেড পণ্য বিক্রি করি। আমাদের জনপ্রিয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে,

পাটের শপিং ব্যাগ

※ পাট ও কটনের হ্যান্ড ব্যাগ

※ পাটের স্ক্রিন প্রিন্টেড গিফট কার্ড

আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো, সৈয়দপুরের দরিদ্র ও বঞ্চিত নারীদের জন্য ন্যায্য কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে যারা পরিবারের প্রধান বা বিধবা।

EMPOWERING ARTISANS

আমরা দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান একশন ব্যাগ হ্যান্ডিক্রাফটস ও ইস্ট স্ক্রিন প্রিন্টার্স সমন্বয়ে গঠিত।

গত তিন দশকে আমরা সৈয়দপুরে প্রায় ১৫০০ কারিগরদের কর্মসংস্থান করে তাদের পাশে দাড়াতে পেরেছি, যাদের অধিকাংশই নারী।

সময়মত তাদেরকে ন্যায্য মজুরী প্রদান এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষন কর্মশালা পরিচালনা, এই দুইভাবে আমরা আমাদের কারিগরদের সহযোগীতা করে থাকি।

TRANSFORMING AN ENTIRE COMMUNITY

আমরা সৈয়দপুর এর কমিউনিটিতে নারীদের মর্যাদাপূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল জীবনের সুযোগ সৃষ্টি করে; তাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছি।

আমরা বিশ্বাস করি যে, নারীরা শক্তিশালী হলে পুরো সমাজ শক্তিশালী হয় এবং সকলে সমুন্নত একটি জীবনধারা উপভোগ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। যত বেশী আয় হয়, পরিবারের সকলের জন্য উন্নত শিক্ষা, পুষ্টি এবং শান্তির নিশ্চয়তা তত বাড়ে।

মূল্যবোধ

আমরা বিশ্বাস করি যে দারিদ্রের চক্র ভাংগার জন্য অসহায় মানুষদের টেকসই জীবিকার সুযোগ দিতে হবে। ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ট্রেড অর্গানাইজেশন (WFTO) এবং বাংলাদেশের ন্যাশনাল ফেয়ার ট্রেড প্ল্যাটফর্ম একতা (EKOTA) এর সদস্য হিসাবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ন্যায্য বানিজ্যের মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।  

FOCUSING ON EDUCATION

প্রতিবছর আমাদের কমিউনিটির ৪০০ এরও বেশী শিশুদের আমরা ইউনিফর্ম, ব্যাগ ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দিয়ে থাকি, বিশেষত যাদের অভিভাবকদের এসব সামগ্রী কেনার সামর্থ্য নেই।

A DEMOCRATIC STRUCTURE

আমরা আমাদের কারিগরদের শুধু কর্মী হিসাবে নয়, নির্বাচিত প্রযোজক ব্যবস্থাপনা কমিটি (Producer Management Committee) এর মাধ্যমে সহ-অংশীদার ও সহ-পরিচালক হিসাবেও দেখার সুযোগ দেই। আমরা বিশ্বাস করি যে এই অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারী কারিগররা ক্ষমতায়িত/শক্তিশালী হন ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠেন।

Our Ethical Commitment

 

Sustainable Sourcing

আমরা সবসময় নৈতিকভাবে সংগ্রহ করা উপকরণ ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেই যাতে আমাদের প্রতিটি পণ্য পরিবেশের উপর সর্বনিম্ন প্রভাব ফেলে।

Fair Labor Practices

প্রত্যেক কারিগরের জন্য ন্যায্য মজুরী ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Eco-friendly Processes

আমরা পরিবেশ সচেতন উৎপাদনপদ্ধতি অনুসরণ করি যাতে অপচয় কম হয় ও পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পায়।

Community Support

আমরা সক্রিয়ভাবে কমিউনিটির প্রতিটি উদ্যোগে অংশ নেই যাতে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সদস্যদের পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে।

BOARD OF TRUSTEES

সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে, যারা বছরে চারবার মিলিত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ভবিষ্যত নীতি, ব্যবসায়িক কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন।

দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন জেনারেল ম্যানেজার, যিনি ট্রাস্টি বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে দায়বদ্ধ।

THE ARTISANS ARE IN CONTROL

প্রযোজক ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিমাসে একবার মিলিত হন এবং প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ব্যবসায়িক নীতিনির্ধারণী সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করেন।

কমিটির সদস্যরা কারিগরদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, কারিগরদের দ্বারা, কারিগরদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হন।